বিদেশি মুদ্রা বিনিময় ও ক্রিপ্টোকারেন্সির পূর্বাভাস, 15-19 মার্চ 2021

প্রথমে গত সপ্তাহের ঘটনাবলির পর্যালোচনা:

  • ইউরো/ইউএসডি. প্রথমেই মনে করা যাক, ফেড জেরোম পাওয়েলের প্রধান 4 ফেব্রুয়ারি এমন-ই এক বক্তৃতা দিলেন যে, তার ফলে তিনি আক্ষরিক অর্থেই আমেরিকার স্টক মার্কেটকে নীচে নামিয়ে আনলেন। ইউএস ট্রেজারির ব্যাবসা বার্ষিক হিসাবে অনেক উঁচুতে উঠলেও পাওয়েল তা নিয়ে নির্বিকার থাকলেন; বরং তিনি আর্থিক নীতিকে উপযুক্ত সময়ের আগেই আঁটোসাঁটো করা হবে বলে ইঙ্গিত দিলেন।
    ফেড-এর প্রধান এই কথার উপর জোর দিয়েছেন যে, দীর্ঘ বৃদ্ধির পর মুদ্রাস্ফীতির জায়গায় পৌঁছতে অর্থনীতির এখনও বহু সময় লাগলেও সূদের হার বাড়ানোর কোনও প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না, আর্থিক নীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তনে ইঙ্গিত দেখা গিয়েছিল বাজারে। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রেজারির ব্যাবসায় ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্টক মার্কেট গড়িয়ে নীচে পড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি500 120 পয়েন্টেরও বেশি হারিয়েছে এবং ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ হারিয়েছে 300 পয়েন্টেরও বেশি।
    এরপর 9 মার্চ মঙ্গলবার সব বদলে গেল। প্রযুক্তির স্টক খুব মজবুত ভাবে বৃদ্ধি পেল, শ্রম বাজার থেকে ইতিবাচক পরিসংখ্যান পাওয়া গেল, গৃহস্থালির সম্পদ বৃদ্ধি পেল এবং 19 হাজার কোটি ডলারের নতুন স্টিমুলাস প্যাকেজ সংক্রান্ত একটি বিলে স্বাক্ষর করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এসবের ফলে আমেরিকার স্টক মার্কেট ঊর্ধ্বমুখী হল। এসঅ্যান্ডপি500 সূচক শুধুই যে ক্ষতির হাত পুরোপুরি উদ্ধার পেয়েছে তা না, সেই সঙ্গে তা ঊর্ধ্বমুখিনতার ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই সূচক 3.960 পর্যন্ত পৌঁছেছে। অন্যদিকে, দীর্ঘ মেয়াদে ট্রেজারির লাভ এক জায়গায় স্থির হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও, ইস্যুর পরিমাণের চেয়ে জমা পড়া আবেদনের পরিমাণ 2.38 গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মোট 380 কোটি ডলারের সিকিউরিটির মধ্যে প্রায় 20 শতাংশ কিনে নিয়েছে।
    11 মার্চ মঙ্গলবারে ইউরো/ইউএসডি জুটি 1.1990-এর উচ্চতায় পৌঁছেছে এইসব কারণে। অবশ্য এটা 1.2000 স্তরে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে। পিইপিপি (প্যান্ডেমিক ইমার্জেন্সি পারচেজ প্রোগ্রাম)-এর অধীনে বন্ড কেনার হার বৃদ্ধি নিয়ে ইসিবি ম্যানেজমেন্টের বিবৃতির ফলে ইউরো/ইউএসডি জুটির পতন হয়েছে এবং ইউরো দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু ওই বিবৃতিকে যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি, এবং পিইপিপি-কে বাড়ানোর ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এর ফলে, ইউরো-ইউএসডি জুটির পতনের কোনও গুরুত্ব ছিল না, এবং এটা সপ্তাহের শেষে 1.1950 স্তরে গিয়ে পৌঁছল।
  • জিবিপি/ইউএসডি. একের পর এক বহু বিশেষজ্ঞ এখন ভাবছেন, 24 ফেব্রুয়ারি পাউন্ড যে-উচ্চতায় পৌঁছেছিল, সেই মাত্রাকে কি ছাড়িয়ে যেতে পারবে? 2020-র মার্চের শেষ দশ দিন থেকে মার্কিন ডলারের তুলনায় ব্রিটিশ মুদ্রা 2830 পয়েন্টের ব্যাপক বৃদ্ধি প্রকাশ করেছে (1.1410 থেকে 1.4240 পর্যন্ত)। এবং গত দু’সপ্তাহ ধরে আমরা লক্ষ করছি, জিবিপি/ইউএসডি জুটি 1.3900 পিভট পয়েন্টের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। ট্রেডিং রেঞ্জের উচ্চতর সীমাকে বেশ স্পষ্ট ভাবেই আঁকা হয়েছে— এটা 1.400-এ গিয়ে থেমে গেছে। সাপোর্ট লেভেলকে কম বলে মনে করা যেতে পারে: নিকটতম হল 1.3850 এবং পরবর্তীটা হল 1.3775।
    গত সপ্তাহের জিবিপি/ইউএসডি চার্ট একেবারে ইউরো/ইউএসডি চার্টের মতোই ছিল। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, ইউএস ফেডারেল রিজার্ভের আর্থিক নীতি এবং মার্কিন সরকারের বন্ডের হারের জিম্মায় থেকে পাউন্ড ও ইউরো এই দুই মুদ্রাই বাজারে খুব বেশি স্বতন্ত্র ভাবে ব্যাবসা করতে পারছে না। সপ্তাহের শুরুতে এই জুটি শুরু করেছিল 1.3840 থেকে এবং সারা সপ্তাহ জুড়ে উপরের রেঞ্জে চলাফেরা করে শেষে 1.3925-এ এসে পৌঁছেছে;
  • ইউএসডি/জেপিওয়াই. সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইয়েন একটার পর একটা মাইলফলক পার করেছে এবং ইউএসডি/জেপিওয়াই জুটি আট মাসের সর্বোচ্চ স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ও স্বল্প এই দুই অবস্থানকে মুক্ত করতে বেশির ভাগ ট্রেডার-ই ভয় পান। একদিকে, এই জুটিকে অতিরিক্ত মাত্রায় কেনা হয়েছে, অন্যদিকে, এই জুটি নিষ্ক্রিয় থেকেও আরও উপরের দিকে যেতে পারে। আসলে ঘটনাটা ঘটেছে এই যে, প্রথমে এই জুটি 109.25 স্তরে পৌঁছেছে, তারপর শুধরে নিয়ে হয়েছে 108.35, এবং নতুন করে 109.00-এর প্রান্তে পৌছেছে এবং এই জুটি সপ্তাহের শেষে এখানেই ছিল;
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি. 21 ফেব্রুয়ারি বিটকয়েন 58,340 ডলার পর্যন্ত উঠেছে, এরপর এটা 26 শতাংশ কমে গিয়ে 43,160 ডলারে গিয়ে নেমেছে। ম্যাটেরিয়াল ইন্ডিকেটরের মতে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের থেকে সম্পত্তি কেনার জন্য এই পতনকে কাজে লাগিয়েছে হোয়েল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যেমন, 1 লক্ষ থেকে 10 লক্ষ ডলারের মধ্যে বিটিসি কেনার অর্ডারের সংখ্যা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে বাইনান্স ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জে। এখন, আজ 20 দিন পর, মানে 12 মার্চে বিটকয়েন ফের 58,000 ডলারের সীমাকে পার করে ঐতিহাসিক ঊর্ধ্বসীমা 58,240-এ গিয়ে পৌঁছেছে। অবশ্য এই পর্যালোচনা লেখার সময় এই ঐতিহাসিক সীমাটাকে ধরা হয়নি।
    ইউএস স্টর মার্কেটের উত্থানের মাঝেই গত সপ্তাহে বিটিসি/ইউএসডি-র উত্থান হয়েছিল। যদিও এটা এই সক্রিয় উত্থানের আনুষ্ঠানিক কারণ মাত্র, কোনও প্রকৃত কারণ নয়। এটা স্পষ্ট জানা ছিল যে, এই জুটি 60,000 ডলারের উপরে যাওয়ার প্রয়াস অতি অবশ্যই পাবে। শুধু প্রশ্ন ছিল এটাই যে, সেই প্রয়াস কখন দেখা যাবে। ক্রিপ্টোকোয়ান্ট-এর মতে, বিটকয়েনের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, এবং এক্সচেঞ্জে তাদের সংখ্যা দু’বছরে সবচেয়ে কম হয়েছে। ব্লুমবার্গের বিশেষজ্ঞরা তাঁদের ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিলেন যে, বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিটকয়েন ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং এটা আস্তে-আস্তে সম্পত্তি হিসাবে সোনার জায়গা দখল করে নিচ্ছে। এই প্রতিবেদনের প্রণেতাদের মতে, মূল্যের উত্থান-পতনের মাত্রা হ্রাস পাওয়া এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, চিরাচরিত ভাবে যেসব সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়, তার আসলে বিকল্প হয়ে উঠছে মূল ক্রিপ্টোকারেন্সি।
    ক্রিপ্টো বাজার সামগ্রিক ভাবে মূলধনে পরিণত হওয়ার ফলেও বিটকয়েনকে সঙ্গে নিয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছনোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গোটা সপ্তাহ জুড়ে এটা 1 লক্ষ 44 হাজার 400 কোটি ডলার থেকে বেড়ে 1 লক্ষ 75 হাজার 600 কোটি ডলার হয়েছে। এখন মনে-মনে এই আশা করা যেতেই পারে যে, এটা 2 হাজার ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।
    মজার কথা হল, বিটিসি/ইউএসডি জুটির সাপ্তাহিক বৃদ্ধি 20 শতাংশ পর্যন্ত হলেও এর উলটো দিকে ক্রিপ্টো ফিয়ার অ্যান্ড গ্রিড ইন্ডেক্স 77 থেকে 70-এ নেমে গেছে। যা কিনা বাজারের সাধারণ বৃদ্ধির হারকে ইঙ্গিত করে।
    আরও একটা আকর্ষণীয় পর্যবেক্ষণ। 2021-এর শুরু থেকে বাজারে বিটকয়েনের প্রভাব 70.4 শতাংশ থেকে কমে 61.4 শতাংশ হয়েছে। সেরা দশ অল্টকয়েনের ইন্ডিকেটরগুলোও কমে গেছে বা একই স্তরে থেমে রয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্রতর টোকেনগুলোর মোট মূলধন পরিণতি 10.3 শতাংশ থেকে বেড়ে 14.4 শতাংশ হয়েছে। এই কয়েনগুলো বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ জাগাতে পারবে বলে মনে হয় না। তাই, এই ধরনের পরিসংখ্যান শুধু এই ইঙ্গিত দেয় যে, ব্যবসায়ীরা স্বল্প মেয়াদি অনুমানের ভিত্তিতে এগুলোকে আরও সক্রিয় ভাবে ব্যবহার করবে।

 

বেশ কয়েক জন বিশেষজ্ঞের মতামতের সারাংশ বের করে, সেই সঙ্গে কারিগরি ও রৈখিক বিশ্লেষণের বিভিন্ন পদ্ধতির ভিত্তিতে করা অনুমানের পর আসন্ন সপ্তাহের অনুমান সম্পর্কে আমরা নীচের কথাগুলো বলতে পারি:

  • ইউরো/ইউএসডি ইউএস ফেডারেল রিজার্ভের সভা 16-17 মার্চে বসবে। ওপেন মার্কেট কমিটির অর্থনৈতিক পূর্বাভাস (এফওএমসি)-এর সারাংশ, সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, আর্থিক নীতির ভাষ্য এবং সভার পরে ফেড ম্যানেজমেন্টের সাংবাদিক সম্মেলনের অপেক্ষায় আছি আমরা। সুদের হার 0.25 শতাংশেই অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তাই, নিয়ামকের পূর্বাভাস নিয়ে বিশেষ আগ্রহ থাকবে। উচ্চ প্রত্যাশা ফের একবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোজোনের অর্থনৈতিক উদ্ধারের গতির মধ্যে থাকা পার্থক্যের উপর আলোকপাত করবে। আর্থিক নীতি আঁটোসাঁটো হওয়ার সম্ভাবনা এবং সরকারি ঋণপত্রের ব্যাবসায় পরিবর্তন সম্পর্কে ফেড ম্যানেজমেন্টর মনোভাব নিয়ে চিন্তায় থাকবেন বিনিয়োগকারীরা। 1.5-1.6 শতাংশে 10 বছরের ব্যাবসার একত্রীকরণের ফলে স্টক মার্কেটের সুবিধা হবে এবং ইউরো/ইউএসডি জুটি 1.2000-এর উপরে যাবে।
    এখন পর্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থায় আছে ডলার। বিশেষজ্ঞদের 70 শতাংশ, রৈখিক বিশ্লেষণের সাহায্য নিয়ে, অসিলেটরের 85 শতাংশ এবং ডি1 বিষয়ক ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরের 80 শতাংশের আশা, এই জুটি 1.1800-1.1850 জোনে গিয়ে পড়বে। এখানে এখনও 1.1826-এ 200 দিনের এসএমএ সাপোর্ট আছে। নিকটতম সাপোর্ট হল 1.1900।
    30 শতাংশ বিশ্লেষকের বিকল্প মত রয়েছে, তাঁরা এইচ4 সংক্রান্ত রৈখিক বিশ্লেষণের সাহায্যে নিজেদের মত প্রকাশ করছেন। এই সময়সীমার মধ্যে টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের ক্ষেত্রে তাঁদের অধ্যয়ন এখনও বিভ্রান্তিকর। উল্লেখ্য, সাপ্তাহিক পূর্বাভাসকে মাসিক পূর্বাভাসে পরিণত করলে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ 60 শতাংশের ঊর্ধ্বগামিতাকেই সমর্থন করছেন। রেজিস্ট্যান্স লেভেল হল 1.2025, 1.2170, 1.2200 ও 1.2270;

  • জিবিপি/ইউএসডি. ইউএস ফেড-এর সভার পাশাপাশি, 18 মার্চ বৃহস্পতিবারে ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডের সভাও বসবে। অতলান্তিকের অপর প্রান্তে থাকা বিনিয়োগকারীদের মতো এ প্রান্তে থাকা বিনিয়োগকারীদের উপর ওইসব সভার ফল কোনও প্রভাব হয়তো ফেলবে না। অবশ্য, ব্রিটিশ অর্থনীতির উদ্ধার প্রক্রিয়া এবং এর সম্ভাবনা সংক্রান্ত তথ্য অবশ্যই দেওয়া হবে। ব্রেক্সিট-এর পর ইউরোপীয় সংঘের সম্পর্কগুলো কেমন আছে তা নিয়ে বাজার চিন্তিত থাকবে।
    এই মুহূর্তে বিশেষজ্ঞদের মতামত সমান-সমান দু’ভাগে বিভক্ত। এঁদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ এইচ4 সংক্রান্ত রৈখিক বিশ্লেষণ করে এই মত প্রকাশ করেছেন যে, এই জুটি 1.3775-1.4000 ট্রেডিং রেঞ্জের মধ্যে থাকবে। অপর এক-তৃতীয়াংশ ডি1 সংক্রান্ত রৈখিক বিশ্লেষণকে সমর্থন করে আশা করছেন, 24 ফেব্রুয়ারিতে হওয়া 1.4240 পর্যন্ত উত্থান হবে। সবশেষে, বাকি এক তৃতীয়াংশ এই জুটির 1.3600 জোনে পতন হওয়ার অপেক্ষায় আছেন;
  • ইউএসডি/জেপিওয়াই. মার্কিন ঋণপত্রের ব্যাবসা বৃদ্ধির ফলে ইয়েন পড়ে গেছে। এখন জাপানি নিয়ামক এই বিপর্যয়ের মোকাবিলা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঋণপত্র যে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে আছে, তাকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে ব্যাঙ্ক অব জাপান জোর দেবে কি না সেটাই দেখার।
    একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, 12 মার্চে ইয়েন-এর শেষবার পতন হয়েছিল এবং ইউএসডি/জেপিওয়াই-র উত্থান হয়েছিল বর্ধিত পরিমাণে। এর থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, এই জুটির ঊর্ধ্বমুখিনতাকে বজায় রাখার ব্যাপারে বড়-বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এই প্রবণতা নিম্নমুখী হতে পারে দু’টি কারণে: ইউএস সিকিউরিটির ব্যাবসাকে একত্রীকরণ করা বা ঝুঁকি থকা সম্পত্তিকে চটজলদি লাভের জন্য বিক্রি করে দেওয়া।
    কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখার সময় 55 শতাংশ বিশেষজ্ঞ এই আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই জুটির এখনও 109.50-110.00 জোন পর্যন্ত উঠতে পারার মতো ক্ষমতা রয়েছে। এইচ4 ও ডি1 এই দুয়ের ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরের প্রায় 100 শতাংশই লাল সংকেত দেখতে পাচ্ছেন। এইচ4 নিয়ে 80 শতাংশ অসিলেটর, কিন্তু ডি1 নিয়ে 35 শতাংশ অসিলেটর এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এই জুটিকে অতিরিক্ত মাত্রায় কেনা হচ্ছে। যা আশু সম্ভাব্য নিম্নমুখী শুদ্ধিকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাপ্তাহিক পূর্বাভাসকে মাসিকে পরিবর্তিত করে 80 শতাংশ বিশ্লেষকই ইতিমধ্যে এই আশা করছেন যে, এই জুট নীচে নেমে গিয়ে ফের 105.00 জোনে এসে পৌঁছবে। সাপোর্ট লেভেলগুলো হল 108.35, 106.65, 106.10 ও 105.70;
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি. মার্চের শুরুর দিকে ক্রিপ্টো ব্যাঙ্ক গ্যালাক্সি ডিজিট্যালের প্রধান মাইক নোভোগ্রাৎজ 2021-এর শেষের জন্য বিটিসি-র হারে প্রবল পরিবর্তন এনেছেন। এই ব্যাঙ্কার বলেছেন, “মনে হচ্ছে, আমরা 42,000 থেকে 60,000 ডলারের মধ্যে থাকব এবং এরপর আমরা এক লাফে 100,000 ডলারে দিয়ে পৌঁছব।”
    মূল ক্রিপ্টোকারেন্সির হার আরও বাড়বে বলে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ টিমও। তাঁরা নিজেদের ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে বলেছেন, “এই কয়েন 50,000-এর উপরে চলে যাওয়ার পর নিজের উচ্চতর মূল্যকে পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়ে গেছে। এই সম্পত্তির চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে এবং এর ম্যাক্রো-ইকোনমিক ইন্ডিকেটরও উন্নত হচ্ছে।” ব্লুমবার্গ বিশ্লেষকদের মতে, বিটকয়েন এই বছর 100,000 ডলারে পৌঁছবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে এর মূল্য ক্রমশ বাড়তে থাকবে।
    মাইক নোভোগার্ৎজের কথায়, বিটকয়েন কতদিন 42,000 থেকে 60,000 ডলারের মধ্যে ঝুলতে থাকবে? না কি আমরা এর বিশাল একটা ঝাঁপের ঠিক আগের মুহূর্তে দাঁড়িয়ে রয়েছি?
    বেশ কয়েক জন বিশেষজ্ঞ নিরাশাবাদী। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলছেন, নতুন চিপগুলোর জন্য নতুন-নতুন ভিডিও কার্ড কেনা মাইনারদের কথা। এর ফলে বাজারে সেইসব কার্ডের দাম ও মজুত বাড়ছে। এই পরিস্থিতি কিছুটা ডিসেম্বর 2017-জানুয়ারি 2018’র শেষের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। যখন বাজারে ধস নেমে মাইনিং-এর বাড়-বাড়ন্ত শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় বহু মাইনার শেষ হয়ে গিয়েছিলেন, এবং ক্রিপ্টো উইন্টারের সূচনা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার সেরকম কোনও উইন্টার বা শীতের আশা না-থাকলেও প্রবল তুষারপাতের সম্ভাবনাকেও খারিজ করা যাচ্ছে না।
    মাইনং করলে বিদ্যুৎ ব্যবহার করার নামে যা খরচ হয়, তার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ডিজিট্যাল সম্পত্তি বৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই প্রক্রিয়ায় যে-পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয় তা ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডসের মতো একটা দেশের বিদ্যুৎ খরচের সমান হয়ে গেছে। কোনও এক সময় এমন হবে, যখন মাত্র একটা ইউনিট জেনারেট করার জন্য গোটা পৃথিবীর বিদ্যুৎকে কাজে লাগাতে হবে। এটাই ক্রিপ্টো বাজারের জন্য অনতিক্রম্য বাধা হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সিঙ্গুলারিটি ইউনিভার্সিটির ভবিষ্যৎ-বিশেষজ্ঞরা।
    অবশ্য পতন নিয়ে আশঙ্কা করা লোকের পাশাপাশি উত্থানের সম্ভাবনা দেখা লোকও রয়েছেন। তাই এআরকে ইনভেস্টমেন্ট-এর প্রধান ক্যাথি উড-এর মতে, এই মুহূর্তে বিটকয়েনের মূল্য সবচেয়ে বেশি রিয়াল এস্টেটের মূল্যের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কে যুক্ত হয়ে আছে। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস, ভবিষ্যতে, ঋণপত্রের মতো কম ঝুঁকি থাকা মাধ্যমের সমান হয়ে যাবে বিটকয়েন এবং বিনিয়োগকারীদের পছন্দের সম্পত্তির তালিকায় এটা ঢুকে যাবে। সিএনবিসি-কে উড জানিয়েছেন, “আমার মনে হয়, প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি বাঁধা আয়ের বাজারের মতো আচরণ করবে। আমরা 40 বছর ধরে ঋণপত্রের উত্থান হওয়া বাজার দেখেছি। এরপর আমরা এটা দেখলে আশ্চর্য হব না যে, নতুন এক শ্রেণির সম্পত্তি বিনিয়োগ মাধ্যমের অংশ হয়ে উঠেছে। হয়তো তখন স্টক 60 শতাংশ, ঋণপত্র 20 শতাংশ এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি 20 শতাংশ হবে।”
    আগামী 10 বছরে বিটকয়েনের হার এক লক্ষ ডলার বা তার বেশি হতে পারে বলে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তা ঘোষণা করেছিলেন ক্র্যাকেন ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের সিইও জেস পাওয়েল। তিনি বলেছেন, “এই মুহূর্তে আমরা শুধু অনুমান করছি। কিন্তু ডলারের নিরিখে আপনারা বিটকয়েনের মূল্য ধরলে বুঝতে পারবেন এর অসীম মূল্য রয়েছে।” ব্লুমবার্গের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে ক্র্যাকেন-এর প্রধান এ-ও বলেছেন যে, বিটকয়েন শেষ পর্যন্ত সেইসব ফ্ল্যাট কারেন্সিরও জায়গা দখল করে নেবে, যেগুলোকে সোনা ও অন্যান্য দামি ধাতুও সরাতে পারেনি। অবশ্য তিনি এ ব্যাপারেও একমত যে, বাজারে প্রবল উত্থান-পতনের ঝুঁকি একটা আছেই। তাই এর মূল্য “যে কোনও দিন 50 শতাংশ উঠতে বা নামতে পারে।” তাই পাওয়েলের মতে, বিটকয়েনে বিনিয়োগ করার আগে নিজেকে এমন ভাবে প্রস্তুত করতে হবে, যাতে এটাকে নিজের কাছে অন্তত পাঁচ বছর রাখা যেতে পারে।

 

নর্ড এফএক্স অ্যানালিটিক্যাল গ্রুপ

 

সতর্কীকরণ: এখানে যা বলা হয়েছে তা বিনিয়োগ সংক্রান্ত পরামর্শ নয় বা আর্থিক বাজারে কাজ-কর্মের কোনও পথ-নির্দেশ নয়। এসব কথার উদ্দেশ্য শুধু তথ্যের যোগান দেওয়া। আর্থিক বাজারে লেনদেন করাটা বেশ ঝুঁকির ব্যাপার এবং এখানে জমা করা পুরো টাকাই জলে চলে যেতে পারে।  

ফিরে যান ফিরে যান
এই ওয়েবসাইটটি কুকি ব্যবহার করে। আমাদের কুকি নীতিমালা সম্পর্কে আরও জানুন।